হেল্থ ভলান্টিয়ারের ইতিহাস ও বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থি
কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবা বা স্বেচ্ছাসেবী /স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবক ধারণাটির সূচনা হয় ৫০ বছর পূর্বে । চীনাদের Bare Footed Doctor কর্মসূচীটি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ । ১৯৯৫ সাল থেকে থাইল্যান্ডও গ্রামীণ স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবার কর্মসূচী গ্রহণ করে । ১৯৭৪ সালে ভারতে রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাল্টিপারপাস হেল্থ ওয়ার্কার নামে ৮৮,৩৪৪ জন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল । ১৯৮৭ খ্রীঃ পর্যন্ত ৮৪৯৯৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । ২০০২ সালে ভারত সরকার ৬০০০ মাল্টিপারপাস হেল্থ ওয়ার্কারের শতভাগ আর্থিক ভাতা প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে । পরবর্তীতে সরকার পর্যায়ক্রমে সকল নিয়োগপ্রাপ্ত মাল্টিপারপাস হেল্থ ওয়ার্কারকে ভাতা প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে । ১৯৭৮ থেকে জাম্বিয়াতেও স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কার নামে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে । যদিও কর্মীদের স্বল্পতা, প্রণোদনব্যবস্থা ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদÐ না থাকার কারণে এখনও তাঁদের কাঠামোগত কোন রূপদান করা যায়নি । ইউনিসেফ ও মন্ত্রণালয় CHTDB (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড) যৌথভাবে ২০১০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলায় পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করে প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে ১ জন করে পাড়াকর্মী ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেয় । গত ২২ জানুয়ারী ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪০০০ তম পাড়াকেন্দ্র উদ্বোধন করেন । এই পাড়াকেন্দ্রে পাড়া কর্মী কর্তৃক শিশুদের প্রধানত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয় । কিন্তু পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপদ মাতৃত্ব, গর্ভকালীন সেবা ও দক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে প্রসব করানো, শিশুস্বাস্থ্য যেমন, এআরআই, পুষ্টি ও প্রারম্ভিক বিকাশ বিষয়েও গ্রামীণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে ।
এ কাজের বিনিময়ে মাসিক ৫০০ টাকা ভাতার পাশাপাশি এসব বিষয়ে তাঁদের স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । ২০০৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী (Village Health Volunteer) কার্যক্রমের সূচনা করে । এ উপলক্ষ্যে VHV -দের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ সহায়িকা ও নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয় । খুলনার পাইকগাছা ও যশোরের চৌগাছা উপজেলাকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা হয় । কেয়ার বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে বাংলাাদেশে এলাকাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের আওতায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে । যেমন; সরকার ও এমএনএইচআই প্রকল্পের আওতায় সিএইচভি নামে নড়াইল ও জামালপুর জেলায় (২০০৯ -২০১২),এসএমপিপি ২ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা জেলায় (২০১১-২০১৬), স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম পরিচালনা হয়। বর্তমানে কেয়ার-বাংলাদেশ জিএসকে সিএইচডাবিøউ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলায় এবং আইইসিএমএনসিএইচ প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলায় যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৬ সাল থেকে স্বাস্থ্যস্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম চলমান রয়েছে । এই স্বেচ্ছাসেবীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাশ । কমিউনিটিতে পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ২৫০-৩০০টি খানার জন্য একজন সিএইচভি বাছাই করে থাকেন । এই সিএইচভিরা মাতৃস্বাস্থ্য, গর্ভকালীন সেবা, প্রসব পরিকল্পনা, প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশুস্বাস্থ্য, কিশোর- কিশোরী স্বাস্থ্য বিষয়ে কমিউনিটিতে স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রদান করেন । একইসঙ্গে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্ম নিবন্ধন করে থাকেন । সিএইচভিদের প্রথমদিকে কোন ভাতা প্রদান করা হতো না তবে বর্তমানে আইইসিএমএনসিএইচ প্রকল্পের আওতায় যাতায়াত বাবদ প্রতিমাসে একহাজার (১০০০) টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে । এ ছাড়া, ব্রাকও নারীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতি ২৫০টি খানার জন্য দেশব্যাপী ৭০০০০ (সত্তর হাজার) স্বাস্থ্যসেবিকা নামে হেল্থ ভলান্টিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্বাস্থ্য সেবিকারা মাসিক কোন ভাতা পান না তবে বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্য উপকরণ বিক্রি করেন এবং প্রতিটি উপকরণ থেকে ১০% হারে কমিশন পেয়ে থাকেন।